
SHRI HANSESHWARI MONDIRE EAKBELA //হংসেশরী মন্দিরে একবেলা....
Eti,Tomader Arnab (Bengali Educational Podcast)
Episode · 4 Plays
Episode · 4 Plays · 6:18 · Jan 10, 2024
About
হুগলি জেলার বাঁশবেড়িয়া অঞ্চলের হংসেশ্বরী মন্দির এমনই এক জায়গা যেখানে ইতিহাস যেন ফিসফিস কথা বলে চলেছে আজও। বেশ কয়েকবার গেলেও প্রতিবারই নতুন লাগে। এর অধরা রূপমাধুরী প্রকৃতভাবে অনুধাবন করার জন্য আবার ছুটে যাওয়া। সাহিত্যিক নারায়ণ সান্যালের ‘হংসেশ্বরী’ পড়েননি এমন মানুষের সংখ্যা বোধহয় বিরল। লেখক এই মন্দির সম্পর্কে ইতিহাস আর কল্পনার মেলবন্ধনে সৃষ্টি করেছিলেন কালজয়ী এই উপন্যাস। মন্দির নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজা নৃসিংহদেবের নাম সর্বজনবিদিত। বাঁশবেড়িয়ার এই মন্দিরে এলেই স্মৃতিসরণি বেয়ে ফিরে যেতে হয় অতীতের ধুলোমাখা দিনগুলোতে। যখন রাজা নৃসিংহদেব তাঁর স্বপ্নের দেউল গড়ে তুলতে প্রাণাতিপাত করছেন আর স্বপ্নে দেখা গর্ভধারিণী মৃতা মায়ের আদলে আশমানি নীল গাত্রবর্ণের পদ্মাসনা দেবী কালিকা মূর্তি স্থাপনের চেষ্টায় সংসার ত্যাগ করে ছুটে বেড়াচ্ছেন এদিক-ওদিক। তিনি আর তখন রাজা নন, সাধারণ এক সন্ন্যাসী, যাঁর একমাত্র লক্ষ্য মন্দির নির্মাণ। নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার আগেই ভাগ্যদেবীর হাতে পরাস্ত হয়ে মহারাজের মৃত্যু হয়। এগিয়ে আসেন ছোট রানিমা শঙ্করীদেবী যিনি সামান্য এক ঘুঁটেকুড়ানি থেকে ছোট রানিমার পদমর্যাদায় উন্নীত হয়েছিলেন। মন্দিরটি তান্ত্রিক সাধনার ষটচক্রভেদের তত্ত্বকে অনুসরণ করে নির্মাণ করা হয়েছে। রাজা রামেশ্বর রায়ের প্রপৌত্র, নৃসিংহদেব মানবদেহের কুলকুণ্ডলিনী তত্ত্বকেই মন্দিরের স্থাপত্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন। শোনা যায়, মন্দির তৈরির জন্য পাথর আনা হয়েছিল উত্তরপ্রদেশের চুনার থেকে এবং মন্দিরের মিস্ত্রি-কারিগরদের আনা হয়েছিল রাজস্থানের জয়পুর থেকে। তাই মন্দিরে রাজস্থানের স্থাপত্যশৈলীর বেশ কিছু নিদর্শনও লক্ষ্য করা যায়। সামনের ফোয়ারা একসময় গঙ্গা নদীর জোয়ার-ভাটার জলেই পূর্ণ থাকত। যদিও এখন সেই পদ্ধতি কালের স্রোতে বিলীন। তবে শীতকালে ফুল দিয়ে এখনও মন্দির চত্বর সাজানো থাকে। মন্দিরের নিত্যপুজোর দায়িত্ব এখনও নৃসিংহদেবের পরিবারের হাতেই ন্যস্ত। ভোগগ্রহণের ব্যবস্থাও আছে। তবে তার জন্য সকাল দশটার মধ্যে এসে কুপন কাটতে হবে। মন্দিরের আগে ধ্বংসপ্রাপ্ত রাজবাড়ি বুকে নানা কাহিনি জমা করে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে। এখানে নীল গাত্রবর্ণের হংসেশ্বরী দেবী সারাবছর দক্ষিণাকালী রূপে পূজিতা হন। মন্দিরের গর্ভগৃহে পঞ্চমুণ্ডির আসনের উপরে প্রথমে রয়েছে সহস্রদল নীলপদ্ম। অষ্টদল পদ্মর উপরে ত্রিকোণ বেদির উপরে শায়িত রয়েছেন মহাকাল। মহাকালের হৃদয় থেকে উত্থিত দ্বাদশদল পদ্মের উপরে, এক পা মুড়ে অবস্থান করছেন দেবী হংসেশ্বরী। বেদি এবং মহাকাল মূর্তিটি পাথরের তৈরি হলেও দেবীমূর্তিটি কিন্তু সম্পূর্ণ নিমকাঠের তৈরি। কালীরূপী হলেও দেবী এখানে উগ্রচণ্ডা নন, বরং তিনি এখানে অনেক শান্ত, স্নিগ্ধরূপা, ত্রিনয়নী, চতুর্ভূজা, খড়্গ ও নরমুণ্ডধারিণী। মন্দির প্রাঙ্গণে নৃসিংহদেবের প্রপিতামহ রাজা রামেশ্বর রায়ের তৈরি কয়েকশো বছরের পুরনো অনন্তবাসুদেব মন্দিরও অবস্থিত। বিষ্ণুপুরের শিল্পরীতিতে অপূর্ব কারুকার্যময় এই মন্দিরের পোড়ামাটির কাজ দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। অনেকটা উঁচু ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত চারচালা কাঠামোর উপরে একরত্ন বিশিষ্ট মন্দিরটির শিখরের চূড়াটি অষ্টকোণাকৃতি। মন্দিরের তিনদিকে রয়েছে তিন-খিলান শোভিত অলিন্দ। গর্ভগৃহে রয়েছে দু’টি প্রবেশদ্বার। গর্ভগৃহে চারহাতে শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম নিয়ে অধিষ্ঠিত পাথরের বাসুদেব মূর্তি। মূর্তির বাম কোণে রয়েছেন নারায়ণ ও ডান কোণে লক্ষ্মী। জনশ্রুতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও এই মন্দিরের টেরাকোটার কাজ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি তখন নন্দলাল বসুকে পাঠিয়েছিলেন এবং নন্দলাল প্রায় একমাস ধরে এই মন্দিরের টেরাকোটার ফলকগুলির ছবি এঁকেছিলেন। পড়ন্ত বিকেলে গোধূলিবেলায় যখন মন্দির চত্বর থেকে বেরিয়ে আসি তখনও যেন কানে বাজতে থাকে নারায়ণ সান্যাল সৃষ্ট চরিত্র শংকরদেবের মন্দ্রমধুর কন্ঠে উচ্চারিত মন্ত্রধ্বনি। সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসে। নাগরিক ক্লান্তি দূর করব বলে বেরিয়ে পড়েছিলাম। দিনের শেষে বাড়িমুখো হই প্রাপ্তির ঝুলি পূর্ণ করে। কীভাবে যাবেন: হাওড়া, শিয়ালদহ, ব্যান্ডেল থেকে বাঁশবেড়িয়া স্টেশন। শিয়ালদহ মেনলাইনে কল্যাণী স্টেশন থেকে অটো বা ম্যাজিক গাড়িতে, ঈশ্বর গুপ্ত সেতু দিয়ে গঙ্গা পার হয়ে, বাঁ দিকে পড়বে হংসেশ্বরী মন্দির। সফরনামা হংসেশরী মন্দিরে একবেলা.... বিশেষ কৃতজ্ঞতা: বর্তমান পত্রিকা। সূত্রধর: অর্ণব।
6m 18s · Jan 10, 2024
© 2024 Podcaster