Episode image

Chupir Char // চুপির চর

Eti,Tomader Arnab (Bengali Educational Podcast)

Episode   ·  4 Plays

Episode  ·  4 Plays  ·  5:01  ·  Jan 17, 2024

About

কচুরিপানা আর ঘন শ্যাওলার জঙ্গল ঠেলে ডিঙি নৌকা এগচ্ছে। সবাই কথা বলছে চুপিচুপি। সামান্য আওয়াজেই হয়তো পাশে বসে থাকা আবাবিল বা রংচঙে মাছরাঙাটা উড়ে চলে যাবে। ব্যস, ছবির দফারফা। তাই কথা নয়, বরং চোখে থাকুক শুধু মুগ্ধতা। চুপির চর— নামের মধ্যেই শান্ত নিরিবিলি ভাব। শীতকালে প্রতি বছর হাজার হাজার পাখি আসে পূর্বস্থলীর চুপির চর-এ। পূর্ব বর্ধমানের ছোট্ট গ্রাম। মূল গঙ্গা নাকি একসময় এর পাশ দিয়েই বয়ে যেত। হয়তো অভিমান করে চুপিকে ছেড়ে চলে গিয়েছে গতি পরিবর্তন করে। রেখে গিয়েছে অশ্বক্ষুরাকৃতি এক বিশাল জলসম্পদ। স্থানীয় বয়স্করা দুঃখ করে বলেন ‘ছাড়ি গঙ্গা’। এই হ্রদ পাখিদের স্বর্গরাজ্য। শীত পড়তেই সুদূর হিমালয়, ইউরোপ, সাইবেরিয়া থেকে পরিযায়ী পাখির দল ভিড় জমায়। তাদের দেখতে হাজির হয় পাখিপ্রেমিক আর ফোটোশিকারীরা। আমরাও সেই নেশাতেই হাজির। মাঝি-কাম পাখি গাইড শ্যামলের সৌজন্যে ঘর ছিল ঘাটের কাছেই। ব্যাগ হোটেলে রেখেই উঠে পড়ি নৌকায়। পাখিদের দেখতে হয় ছোট নৌকায় জলে ভেসে। মাঝিরাই গাইড। নৌকার সঙ্গে উড়ছে কয়েকটা বার্ন সোয়ালো বা পাতি আবাবিল। ঘন শ্যাওলায় মাঝে মাঝে আটকাচ্ছে নৌকা। জলের মধ্যে ঘাস ও কাদার ছোট ছোট দ্বীপ। ওইরকম এক দ্বীপে ঘাসের ফাঁক থেকে উঁকি মারতে দেখলাম কয়েকটা গ্রে হেডেড সোয়াম্পেনকে। কাছে এগতে চোখে পড়ল বেশ কয়েকটা ব্রোঞ্জ উইংড জাকানা। জলাশয়ের একেবারে মাঝে চলে আসায় আরও অনেক জাতের পাখি চোখে পড়ছে। কিছুটা দূরে ঝাঁকে রাঙামুড়ির দল মনের আনন্দে সাঁতার কাটছে। এদের মাঝেই ঘুরে বেড়াছে কমন কুট, কটন পিগমি গুজ, গাডওয়াল সহ নানা পরিযায়ী পাখি। নাম যত সহজে বলছি, এদের চেনা ঠিক তত সহজ নয়। ঘুরে বেড়াচ্ছে কয়েকরকম মাছরাঙা। একটা গ্রে হেরন বড় ল্যাটা মাছ শিকার করে ডানা ঝাপটে উড়ে গেল। উড়ল একদল বালি হাঁস। আস্তে আস্তে হ্রদের জল লালচে। অস্তগামী সূর্যে অপরূপা হ্রদ। দিনশেষে ফিরে যাওয়া। পরদিন আবার অভিযান খুব সকালে। কুয়াশায় মোড়া চুপির চর আরও নিশ্চুপ। আজ ‘রাজদর্শনে’ যাচ্ছি। একধরনের বাজপাখি এই মূহূর্তে চুপির চরের রাজা। সব আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। সরু খাঁড়ির দু’পাশ থেকে নলখাগড়ার লম্বা লম্বা ডালপালা ঝুঁকে পড়েছে নৌকার উপরে। দু’হাতে ডালপালা সরিয়ে কখনও বা মাথা ঝুঁকিয়ে এগতে হচ্ছে। মাঝির ভাষায় ‘গরিবের আমাজন’। জঙ্গল অবশেষে গিয়ে পড়ল গঙ্গার মূল ধারায়। এবার হাপিত্যেশ করে বসে থাকা। এক মাঝি ফিসফিসিয়ে বলল মহারাজ মাছ আনতে গিয়েছেন। সময় হলেই দেখা দেবেন। হঠাৎ শ্যামল বলল ক্যামেরা রেডি করুন। আসছে। স্পষ্ট হল গাঢ় বাদামি রঙের বিরাট পাখাওয়ালা একটা পাখি, পায়ের নখে ধরা বড়সড় মাছ। একপায়ে মাছ নিয়ে বসল চরের কাছে বাঁশের খুঁটিতে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চারদিকে দেখার পর অদ্ভুত নিপুণতায় তার মাছ খাওয়ার অসাধারণ দৃশ্যের সাক্ষী থাকলাম টেলি-লেন্সে চোখ দিয়ে। খাওয়া সাঙ্গ হলে নদীর জলে ডানা ঝাপটে নাক-মুখ পরিষ্কার করে মিলিয়ে গেল আকাশে। কীভাবে যাবেন: হাওড়া-কাটোয়া লোকালে পূর্বস্থলী স্টেশন। তারপর টোটোতে চুপির চর। সরকারি গেস্ট হাউস পরিযায়ী অথবা বেসরকারি হোটেলও আছে। সফরনামা পাখির আশায় চুপির চর.... বিশেষ কৃতজ্ঞতা: বর্তমান পত্রিকা। সূত্রধর: অর্ণব।

5m 1s  ·  Jan 17, 2024

© 2024 Podcaster